Hasana - ওমরাহ গাইড 

ওমরাহ গাইড

ওমরাহর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

ওমরাহর প্রধান রুকন হল তাওয়াফ, সায়ী এবং মাথা মুণ্ডন/চুল কাটা। যাত্রার আগে Ihram, নিয়ত এবং তাওয়াফের দোয়া মুখস্থ করে নিন।

ভ্রমণের প্রস্তুতি

  • পাসপোর্ট, ভিসা, সনদ ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র যাচাই করুন।
  • যাত্রার আগে ইহ্‌রাম এর কাপড় এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রস্তুত রাখুন।
  • পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সাথে বিদায়কালে দোয়া করুন।

ইহ্‌রাম ও নিয়ত

لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ عُمْرَةً

লাব্বাইক্‌ আল্লহু উম্‌রতান।

অর্থ: "হে আল্লাহ, আমি ওমরাহর জন্য হাযির।"


মীকাত সীমান্তে পৌঁছে ইহরামের কাপড় পরিধান করুন, দুই রাকাত নফল সালাত আদায় করুন এবং নিয়ত করে তালবিয়া পড়তে থাকুন।

لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لاَ شَرِيْكَ لَكَ

লাব্বাইক্‌ আল্লহুম্মা লাব্বাইক্‌, লাব্বাইক্‌ আলা শারীকা লাকা লাব্বাইক্‌, ইন্নাল্‌ হামদা ওয়া ন্নিমাতা লাকা ওয়াল্‌ মুল্‌ক্‌, লা শারীকা লাক্‌।

অর্থ: "আমি হাযির, হে আল্লাহ আমি হাযির। তোমার কোনো শরীক নেই, আমি হাযির। निश्चयই সমস্ত প্রশংসা ও নেয়ামত তোমারই এবং রাজত্বও, তোমার কোনো শরীক নেই।"

কাবা ঘর তাওয়াফের প্রস্তুতি

এই দোয়াটি মসজিদে প্রবেশের সময় পাঠ করার জন্য বর্ণিত হয়েছে। এটি আল্লাহর কাছে সুরক্ষা চাওয়া এবং তাঁর রহমত প্রাপ্তির একটি সুন্নতি দোয়া।

بِسْمِ اللَّهِ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ، أَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ، اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ

উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি ওয়াস্‌ সলাতু ওয়াস্‌ সালামু আলা রসুলিল্লাহ্‌। আঊযুবিল্লাহিল্‌ আযীমি ওয়া বিওয়াজ্‌হিহিল কারীম ওয়া সুল্‌তানিহিল ক্বদীমি মিনাশ্‌শাইত্বানির্‌, রজীম্‌। ,আল্লহুম্মাফ্‌তাহলি আব্‌ওয়াবা রহ্‌মাতিকা।

অর্থ: "আল্লাহর নামে। তাঁর রাসূলের ওপর দরূদ ও সালাম। আমি মহান আল্লাহর আশ্রয় নিচ্ছি তাঁর সম্মানিত সত্তার ও তাঁর চিরস্থায়ী ক্ষমতার মাধ্যমে। বিতাড়িত শয়তান থেকে। হে আল্লাহ, আমার জন্য তোমার রহমতের দরজা খুলে দাও"।


এই দোয়াটি পড়া সুন্নত, অর্থাৎ নবী (সাঃ) এটি পড়েছেন এবং অন্যদেরও পড়তে উৎসাহিত করেছেন। কাবা ঘরে প্রবেশকালে এই দোয়া পড়া হলে আল্লাহ বান্দার জন্য তাঁর রহমতের দরজা খুলে দেন।

তাওয়াফের ধাপ

  1. তাওয়াফ শুরু করার পূর্বেই তালবিয়াহ পাঠ বন্ধ করে দেয়া
  2. নিয়ম হল প্রথমে ‘হাজারে আসওয়াদ (কাল পাথরের) কাছে যাওয়া, ‘‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’’ বলে এ পাথরকে চুমু দিয়ে তাওয়াফ কার্য শুরু করা।
  3. কাবাঘরকে বামপাশে রেখে তাওয়াফ করতে হয়। তাওয়াফের প্রথম চক্রে ‘‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’’ বলে নীচের দোয়াটি পড়তে পারলে ভাল হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি করতেন। দোয়াটি হলঃ

    اَللَّهُمَّ إِيْمَانًا بِكَ وَتَصْدِيْقًا بِكِتَابِكَ وَوَفَاءً بِعَهْدِكَ وَاتِّبَاعًا لِسُنَّةِ نَبِيِّكَ مَحَمَّدٍ -صلى الله عليه وسلم

    উচ্চারণ: আল্লহুম্মা ঈমানান বিকা ওয়া তাস্‌দীক্বন বিকিতাবিকা ওয়া ওয়াফাআন, বিআহ্‌দিকা ওয়াত্তিবাআন লিসুন্নাতি নাবিয়্ইকা মুহাম্মাদিন্‌ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম্‌।

    অর্থ: "হে আল্লাহ! তোমার প্রতি ঈমান এনে, তোমার কিতাবের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তোমার সাথে কৃত অঙ্গীকার পূরণের জন্য তোমার নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাতের অনুসরণ করে এ তাওয়াফ কার্যটি করছি।"

  4. প্রথম তিন চক্রে পুরুষগণ ছোট ছোট পদক্ষেপে দৌড়ের ভঙ্গিতে সামান্য একটু দ্রুত গতিতে চলতে চেষ্টা করবেন। আরবীতে এটাকে ‘রম্ল’ বলা হয়। বাকী চার চক্র সাধারণ হাঁটার গতিতে চলবেন। মক্কায় প্রবেশ করে প্রথম যে তাওয়াফটি করতে হয় শুধু এটাতেই প্রথম তিন চক্রের রম্লের এ বিধান। এরপর যতবার তাওয়াফ করবেন সেগুলোতে আর ‘‘রম্ল’’ করতে হবে না। মহিলাদের রমল করতে হয় না।
  5. পুরুষেরা ইহরামের গায়ের কাপড়টির একমাথা ডান বগলের নীচ দিয়ে এমনভাবে পেঁচিয়ে দেবেন যাতে ডান কাঁধ, বাহু ও হাত খোলা থাকে। কাপড়ের বাকী অংশ ও উভয় মাথা দিয়ে বাম কাঁধ ও বাহু ঢেকে ফেলবেন। এ নিয়মটাকে আরবীতেও اضطباع (ইবিতিবা) বলা হয়। এটা শুধুমাত্র প্রথম তাওয়াফে করতে হয়। পরবর্তী তাওয়াফগুলোতে এ নিয়ম নেই, অর্থাৎ ডান কাঁধ ও বাহু খোলা রাখতে হয় না।
  6. রুকনে ইয়ামানী ও হাজরে আসওয়াদের মাঝের দোয়া

    رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

    উচ্চারণ: রব্বানা আতিনা ফিদ্‌ দুন্‌ইয়া হাসানাতাও্‌ ওয়া ফিল্‌ আখিরতি হাসানাতাও্‌ ওয়াক্বিনা আযাবান্নার্‌।

    অর্থ: "হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান করুন এবং আমাদের জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন।"

  7. তাওয়াফের ৭ চক্র শেষ হলে দু’কাঁধ এবং বাহু ইহরামের কাপড় দিয়ে আবার ঢেকে ফেলবেন এবং ‘‘মাকামে ইব্রাহীমের’’ কাছে গিয়ে পড়বেনঃ

    وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلّىً

    উচ্চারণ: ওয়াত্তাখিযূ মিম্‌ মাক্বামি ইব্‌রহীমা মুসল্লা।

    অর্থ: "ইব্রাহীম (পয়গাম্বর)-এর দন্ডায়মানস্থলকে সালাত আদায়ের স্থান হিসেবে গ্রহণ করো"।


    অতঃপর তাওয়াফ শেষে এ মাকামে ইব্রাহীমের পেছনে এসে দু’রাকআত সালাত আদায় করবেন। ভীড়ের কারণে এখানে জায়গা না পেলে মসজিদে হারামের যে কোন অংশে এ সালাত আদায় করা জায়েয আছে। মানুষকে কষ্ট দেবেন না, যে পথে মুসল্লীরা চলাফেরা করে সেখানে সালাতে দাঁড়াবেন না। সুন্নত হলো এ সালাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর প্রথম রাকআতে সূরা কাফিরূন এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা ইখলাস পড়া।

  8. যমযমের পানি পান করার দোয়া

    اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَرِزْقًا وَاسِعًا وَشِفَاءً مِنْ كُلِّ دَاءٍ

    উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আস্‌ আলুকা ইলমান নাফিআন ওয়া রিজক্বন ওয়াসিআন ওয়া শিফাআন মিন কুল্লি দা ইন।

    অর্থ: "হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে উপকারী জ্ঞান, প্রশস্ত রিজিক এবং সকল রোগ থেকে নিরাময় প্রার্থনা করছি"।


    পান করার শুরুতে: বিসমিল্লাহ (আল্লাহর নামে) বলে পান করা শুরু করতে হয় এবং তিন নিশ্বাসে তৃপ্তিসহকারে পান করতে হয়। পান করা শেষে: পানি পান করার পর আলহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য) বলে আল্লাহর প্রশংসা করতে হয়।

সায়ী ও সমাপ্তি

সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে পড়ার দোয়া

প্রথম দোয়া পড়া: সাফা পাহাড়ে উঠে কিবলামুখী হয়ে এই দোয়াটি পড়তে হবে:

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

বাংলা উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লহু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহূ লাহুল মুল্‌কু ওয়ালাহুল হাম্‌দু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাই ইন ক্বদীর।

অর্থ: "আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই। তিনি এক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই। তাঁরই সাম্রাজ্য এবং তাঁরই জন্য সকল প্রশংসা। তিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান"।

দ্বিতীয় দোয়া পড়া: সাফা ও মারওয়াকে আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করে এই আয়াতটি পড়তে হবে:

إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِن شَعَائِرِ اللَّهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَن يَطَّوَّفَ بِهِمَا وَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَإِنَّ اللَّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ

বাংলা উচ্চারণ: ইন্নাস্‌ সফা ওয়াল্‌ মার্‌ওয়াতা মিন শাআইরিল্লাহি ফামান হাজ্জাল বাইতা আওই-তামারা ফালা জুনাহা আলাইহি আই্‌-ইয়াত্তও্‌ওয়াফা বিহিমা ওয়া মান্‌ তাত্বাও্‌ওয়াআ খাইরান্‌ ফাইন্নাল্লহা শাকিরুন আলীম।

অর্থ: "নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং, যে ব্যক্তি আল্লাহর ঘরের হজ্জ করবে বা ওমরাহ করবে, তার জন্য এই দুটি পাহাড়ের মধ্যে ভ্রমণ করা কোনো পাপ হবে না। যে কেউ স্বেচ্ছায় কোনো ভালো কাজ করবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ সে বিষয়ে অবগত ও প্রতিদানদাতা"।


সাতবার সায়ী করা: এরপর সাফা থেকে মারওয়ার দিকে সাতবার আসা-যাওয়া সম্পন্ন করতে হবে। এই সময় সবুজ চিহ্নিত স্থান অতিক্রম করার সময় পুরুষরা দৌঁড়ে যাবে, কিন্তু নারীরা দৌঁড়াবে না। দোয়াসমূহ: সায়ির সময় আপনি নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী অন্যান্য দোয়া ও প্রার্থনা করতে পারেন।

দোয়া ও শিষ্টাচার

  • প্রতিটি ধাপে শান্ত ও নম্র আচরণ বজায় রাখুন।
  • ফরজ ও সুন্নাহ নামাজ জামায়াতে পড়ার চেষ্টা করুন।
  • কাবার সামনে বেশি বেশি দোয়া করুন ও ইবাদতে মনোনিবেশ করুন।